🎬 ট্যুরিস্ট ফ্যামিলি: হাসি-কান্নার এক সাদামাটা পারিবারিক মেলবন্ধন

মূল কাহিনি:
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতে এক তামিল পরিবার (দাস, ভাসন্তী ও তাদের দুই সন্তান) অবৈধভাবে ভারতের রামেশ্বরমে প্রবেশ করে। চেন্নাইয়ে আশ্রয় নেওয়ার পর তারা নতুন জীবন গড়ার চেষ্টা করে, কিন্তু স্থানীয় পুলিশের সন্দেহ ও একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা তাদের জীবনকে জটিল করে তোলে। আশেপাশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সংস্কৃতির সংঘাত এবং মানবিক মূল্যবোধের লড়াই এই গল্পের প্রাণ।

স্পয়লার:

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ধস থেকে বাঁচতে এক তামিল পরিবার—দাস, তার স্ত্রী ভাসন্তী ও তাদের দুই সন্তান—দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। তারা এক রাতে অবৈধভাবে একটি ছোট্ট বোটে চড়ে ভারতের রামেশ্বরম উপকূলে পা রাখে। কিন্তু তীরে ওঠার সাথেসাথেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে এবং সন্দেহভাজন হিসেবে গাড়িতে তোলে।

এখানে প্রথম টুইস্ট—ছোট ছেলেটির সাহসিকতা ও উপস্থিত বুদ্ধিতে পুলিশ বিভ্রান্ত হয় ও তাদের ছেড়ে দেয়।

তাদের ভারতে টিকে থাকার সংগ্রামে একমাত্র ভরসা হয় ভাসন্তীর ভাই (যোগী বাবু)। একাধারে হাস্যরসের উৎস ও সহানুভূতির প্রতীক এই চরিত্রটি, যারা বাস্তবতাকে স্বীকার করেও বেঁচে থাকার পথ দেখায়। তিনি বাসা খুঁজে দেন, নকল আধার কার্ড তৈরি করেন, এমনকি ভোটার আইডিও জোগাড় করে দেন। তার চরিত্র মুভিতে ব্যতিক্রমী ভারসাম্য আনে।

পরিবারটি একটি বাড়িতে থাকার সুযোগ পায় যার নিচতলায় থাকেন একজন পুলিশ অফিসার। তাদের ঠিক উপরে উঠে শুরু হয় এক “ভুয়া পরিচয়ে নির্মিত আসল সংসার”।

এদিকে দাস কাজ খোঁজে। একদিন সে বাড়ির পাশে ড্রাইভারের দরকার লেখা দেখতে পায়। যোগীর সহায়তায় সে নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দেয়। মালিক বলে ৭ দিনের ট্রায়াল, তারপর স্থায়ী চাকরি।

সব কিছু যখন ভালোভাবে চলছিল, তখনই শহরে ঘটে একটি ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ। পুলিশ ফুটেজ ঘেঁটে দেখতে পায় সন্দেহজনকভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়ে দাসের পরিবার। অবিলম্বে শুরু হয় তদন্ত, এবং আগের সেই পুলিশ সদস্যরাও আতঙ্কে পড়ে—যারা প্রথমে তাদের ছেড়ে দিয়েছিল।

ক্লাইম্যাক্সে পুলিশের বড়সড় রেইড হয় তাদের কলোনিতে। একে একে সব পরিবারকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হয় – “তারা কি সেই পরিবার?” অবশেষে দাসের ঘরেও হানা পড়ে। সেই পুলিশ অফিসারও সঙ্গে থাকে।

জিজ্ঞাসাবাদের পরেও অফিসার অস্বীকার করে – না, এরা সেই পরিবার নয়। পুলিশ ব্যর্থ হয়ে চলে যায়।

তবে রেইড শেষে, দাস সেই পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেস করে – “আপনি জানেন আমরা সেই পরিবার। বললেন না কেন?”

তার জবাব মুভির সারকথা হয়ে দাঁড়ায় –
“আপনি খারাপ মানুষ নন। আপনার পরিবার এই পুরো কলোনিকে বদলে দিয়েছে। এখন সবাই শ্রীলঙ্কার একসেন্টে কথা বলে। তারা মানুষ হিসেবে আপনাদের গ্রহণ করেছে। আমি তাদের পরিবারকে বাঁচালাম, কোনো শত্রু নয়।”

এই সিনেমা নিছক একটি অবৈধ অনুপ্রবেশের গল্প নয়। এটি এক অন্তর্নিহিত মানবিকতা ও সংস্কৃতি-সহাবস্থানের গল্প। সিনেমাটি প্রশ্ন তোলে—আইনের চেয়ে কি মানবিকতা বড় নয়? একজন ভালো মানুষের জন্য পুরো সমাজ বদলাতে পারে না কি?

ভাসন্তীর ভাই যোগী বাবুর মাধ্যমে আমরা দেখি কিভাবে হাসির আড়ালে সত্যিকারের সহানুভূতি লুকিয়ে থাকে। পুলিশের চরিত্রগুলোর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, দায়িত্ব বনাম বিবেক—সব মিলে সিনেমাটি পলিটিক্যাল থ্রিলারের সঙ্গে একটি মানবিক দলিল হয়ে দাঁড়ায়।